জীবিকার সন্ধানে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ বিদেশ পাড়ি দেয়। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী কর্মীরা কাজ করে থাকেন। তৃতীয় বিশ্বের এই দেশটি থেকে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকেরা বিদেশের বিভন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজে নিযুক্ত থাকেন। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো দিনরাত কাজের বিনিময়ে আশানুরূপ বেতন কোনো দেশেই তারা পান না। প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের এটি হলো একটি বিশেষ সমস্যা। কিন্তু এর কি কোনো সমাধান আছে? হ্যা, অবশ্যই আছে। চাকুরী প্রার্থী যদি কাজে যোগদানের আগেই কয়েকটি বিষয়ে একটু বুদ্ধি করে পদক্ষেপ নেন তা হলে বিদেশ চাকরি করে আর্থিক ভাবে লাভবান হতে পারেন।
শ্রম অভিবাসনের ক্ষেত্রে সৌদি আরব এখন পর্যন্ত বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রথম পছন্দ ছিল। কিন্তু পরিসংখান অনুযায়ী বিগত কয়েক বছর ধরে এই চিত্রটির বদল হয়েছে। সৌদির অপেক্ষায় বেশি সংখ্যায় বাংলাদেশী শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গিয়েছিল। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) থেকে প্রাপ্ত একটি তথ্য অনুযায়ী বিগত সাড়ে তিন বছরের বিরতির পর ২০২২ এর প্রথম দিকে মালয়েশিয়া বাংলাদেশী শ্রমিকদের পনুরায় নিয়োগ শুরু করে। এর পর থেকে ২০২৩ এর মে মাস পর্যন্ত মালয়েশিয়া ৩৫,১৯০ জন বাংলাদেশী কর্মীকে নিয়োগ করেছে।
যত দিন যাচ্ছে আরবের দেশগুলিতে কাজের তুলনায় বেতনের হার কমে যাচ্ছে। সৌদি আরবে একজন বাংলাদেশি শ্রমিক সর্বনিম্ন বেতন পান ৮০০-১000 সৌদি রিয়াল যা প্রায় ২৩,000-২৮,000 টাকা। অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় সর্বনিম্ন বেতন হলো ১৫00 মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত যা প্রায় ৩৫০০০ টাকা।
বিদেশ চাকরি খোঁজার আগে একজন প্রার্থীকে যাচাই করে দেখতে হবে কোন দেশে বেশি টাকা উপার্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে আরব দেশগুলি থেকে মালোয়েশিযাতে চাকরির বাজার অপেক্ষাকৃত ভালো। এই বিষয়টি বিবেচনা করে এগোলে কর্মী অবশ্যই লাভবান হতে পারবেন।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে থাকে। তারা সরকারকে সবসময় দক্ষ শ্রমিক সরবরাহের জন্য তাগাদা দেয় কিন্তু প্রয়োজন পূরণ করা সম্ভব হয় না। এর কারণ হলো গ্রাম থেকে অশিক্ষত বা স্বল্প শিক্ষিত যুবকেরা যে কোনো কাজের জন্য বিদেশ যেতেই উৎসাহিত থাকে। তারা বিবেচনা করে না যে কোনো একটি বিশেষ বিষয়ে পারদর্শী হলে একদিকে মোটা অংকের বেতন যেমন পাওয়া যায় তেমনি শ্রমিক শ্রেণীর কর্মীদের অপেক্ষা কাজ ও কম করতে হয়। আর এরপরে ভবিষ্যতে পদোন্নতির সম্ভাবনা তো থেকেই যায়। এক্ষেত্রে করণীয় হলো বিদেশে চাকরির চেষ্টার দুই বছর আগে কোনো ছয় মাসের টেকনিক্যাল কাজে প্রশিক্ষণ নেওয়া। বাংলাদেশে বেশ কিছু ভোকেশনাল কোর্স চালু আছে যেমন ওয়েল্ডিং,ট্রাক ড্রাইভিং,কার্পেন্টারি, রান্নার কাজ, হাসপাতাল টেকনিশিয়ান যেমন পাথলোজিকাল ওয়ার্ক, এক্স-রে টেকনিশিয়ান, এসি মেকানিক, ফ্রিজ রিপেয়ারিং, ইলেক্ট্রিসিয়ান, পাইপ ফিটিং,গাড়ি মেরামতি, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার এবং এই রকম আরও অনেক ধরণের কাজ। কোর্স করার পর যদি একবার দেশে কোনো প্রতিষ্ঠানে কয়েক মাসের জন্য প্রাকটিকাল অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায় তা হলে বিদেশে গিয়ে মোটা টাকা আয়ের নিশ্চিত সুযোগ থাকে।
আরেকটি বিষয় হল আরবে যেতে হলে সরকারি ভাবে একজন কর্ম প্রার্থীর ১,৬৫,০০০ টাকা ও মালয়েশিয়া ক্ষেত্রে কর্মপ্রার্থী পিছু ৭৯,০০০ টাকা খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে এই অঙ্কটা অনেক গুণ বেড়ে যায়। সৌদি আরবে যেতে গেলে প্রায় ৪ লক্ষ আর মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে ৩-৪ লক্ষ টাকা জব প্লেসমেন্ট এজেন্সি কে দিতে হয়। এরপর বিদেশ গিয়ে যদি বেশ ভালো বেতন না পাওয়া যায় তা হলে চাকরির মেয়াদ শেষে দেশে আশানুরূপ অংকের টাকা নিয়ে আসা যায় না। এক্ষেত্রে চাকুরী প্রার্থীকে যথেষ্ট সচেতন হয়ে ভালো প্লেসমেন্ট কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কোনো নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্টানের মাধ্যমে বিদেশে চাকরিতে যোগদান করতে পারলে অযথা হয়রানি ও অত্যাধিক টাকা ও ব্যয়ের ও প্রয়োজন হবে না।